থাইরয়েড রোগ: অবহেলা নয়, সচেতনতাই উত্তম চিকিৎসা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দীর্ঘদিন ক্লান্তি, মন খারাপ, ওজন বেড়ে যাওয়া বা হঠাৎ কমে যাওয়া, চুল পড়া কিংবা মনোযোগে ঘাটতি—এসবকে আমরা অনেক সময় অবহেলা করি। অথচ এই উপসর্গগুলো হতে পারে থাইরয়েড সমস্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বিশ্বব্যাপী প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন কোনো না কোনোভাবে থাইরয়েড সমস্যায় ভোগেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই না জেনে বছরের পর বছর ধরে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে দেহ ও মনের উপর প্রভাব সহ্য করছেন।
থাইরয়েড ও মানসিক স্বাস্থ্য:
এক অদৃশ্য সংযোগ থাইরয়েড হরমোন শুধু বিপাক (metabolism) নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং তা মস্তিষ্কের বিভিন্ন রসায়নে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলে এই হরমোনের ঘাটতি বা অতিরিক্ততা মানসিক অবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি):
১। মানসিক অবসাদ (Depression)
২। ভুলে যাওয়া, মনোযোগে ঘাটতি
৩। ঘুম বেশি পাওয়া
৪। হতাশা, বিষণ্নতা
হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ততা):
১। উদ্বিগ্নতা (Anxiety), অস্থিরতা
২। তাড়াতাড়ি রেগে যাওয়া
৩। ঘুমের সমস্যা
৪। অতিরিক্ত চিন্তা বা ভয়
একজনের জীবনে যখন এসব মানসিক উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে, তখন থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
লক্ষণগুলো চেনা জরুরি-
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ:
১। অতিরিক্ত ক্লান্তি
২। শরীর ঠান্ডা অনুভব হওয়া
৩। ওজন বৃদ্ধি
৪। শুষ্ক ত্বক, চুল পড়া
৫। মন খারাপ ও ধীর মনোভাব
হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ:
১। ওজন কমে যাওয়া
২। হূদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
৩। ঘাম বেশি হওয়া
৪। হাত কাঁপা
৫। চট করে রেগে যাওয়া
পরীক্ষা ও শনাক্তকরণ-
১। TSH, FT3, FT4—এই তিনটি রক্ত পরীক্ষা থাইরয়েড সমস্যার ধরন নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২।অতিরিক্ত বা ঘাটতি—দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক।
চিকিৎসা:
ব্যক্তিভেদে আলাদা পরিকল্পনা প্রয়োজন -
-> হাইপোথাইরয়েডিজমে সাধারণত লেভোথাইরক্সিন জাতীয় হরমোন প্রতিস্থাপন ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
-> হাইপারথাইরয়েডিজমে ব্যবহার হয় হরমোন রোধকারী ওষুধ, কখনও-সখনও রেডিওআইডিন থেরাপি বা অস্ত্রোপচার।
লক্ষ্য একটাই: রোগ নয়, রোগীর লাইফস্টাইল অনুযায়ী চিকিৎসা।
-জীবনযাপনে প্রয়োজন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন
-ধ্যান ও যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক
-পরিমিত খাবার, আয়োডিনযুক্ত লবণ
-ঘুম পর্যাপ্ত ও নিয়মমাফিক
-প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা
-মোবাইল/স্ক্রিন টাইম কমানোও ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
বিশেষজ্ঞ মতামত :
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. ফারহানা হক বলেন:
"অনেক সময় হতাশা, অস্থিরতা বা মনোযোগের অভাবকে আমরা মানসিক সমস্যা মনে করি। কিন্তু রোগীর পুরো শারীরিক পটভূমি না বুঝে কিছু বলা ঠিক নয়। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মানসিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।"
আপনার হরমোন আপনার হাতে। থাইরয়েড রোগ কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। সঠিক পরীক্ষা, পরামর্শ এবং যত্নে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শরীর ও মন—দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিন।
তাই বার্তাটি পরিষ্কার: "নিজেকে জানুন, লক্ষণ বুঝুন, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করুন।"