ব্যাংকিং সেক্টরে ৩ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে

ব্যাংকিং সেক্টরে ৩ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ ফেরানোর জন্য নতুন কৌশল ও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি দেশের আইনের বাইরে বিদেশী আইনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে কাজ করতে হবে। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।

এই উদ্যোগের প্রথম ধাপ হিসেবে পাচারকৃত অর্থের সম্পত্তি বা এস্টেট ফ্রিজ করার কথা বলেন গভর্নর। তিনি উল্লেখ করেন, "বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি এবং চিঠি প্রেরণ করছি। এছাড়াও আমরা আন্তর্জাতিক আইন ফার্মের সঙ্গে আলোচনা করছি এবং শিগগিরই এই ফার্মগুলোকে নিয়োগ দেওয়া হবে।"

তিনি আরও জানান, এস্টেট ট্রেসিং ফার্মের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাচারকৃত সম্পত্তি ফ্রিজ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটিকেই প্রাথমিক সফলতা হিসেবে গণ্য করা হবে।

পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, "আমার ধারণা মোট পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের একটি বড় শিল্পগ্রুপ ও তাঁর পরিবারের নাম রয়েছে। বেক্সিমকোর পাচারকৃত অর্থ ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। এগুলো শুধু বড় গ্রুপের কথা। ছোট গ্রুপগুলোকে এখনও বিবেচনায় আনা হয়নি।"

তিনি আরও বলেন, "ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আটকানোর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় রেগুলেটরি সংশোধন করতে চাই।"

সমঝোতার ভিত্তিতে টাকা ফেরানো

গভর্নর জানান, পাচারকৃত অর্থ ফেরানোর জন্য শুধু আদালতের মাধ্যমে নয়, বরং আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্টেরও প্রচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, "সব তথ্য জোগাড় করার পর নেগোসিয়েশনে যাওয়া হবে। নেগোসিয়েশনে সঠিক তথ্য নিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। না হলে আমরা ঠকে যেতে পারি।"

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ

অতীতে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে দেখানোর অভিযোগের প্রতি লক্ষ্য করে গভর্নর বলেন, "খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি পূর্বে ৯-১০ শতাংশ দেখানো হতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। গত মাসে এটি দেখা গেছে ৮-৯ শতাংশে। সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি স্বস্তির দিকেই আছে। আগামী বছর এটিকে ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের উপপরিচালক মো. জোবাইর হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমান, চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মো. সালাহ উদ্দীনসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এই প্রচেষ্টা আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি কার্যকর হবে।


সম্পর্কিত নিউজ