প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা ও ভাষা - ডলফিন, কাক ও শিম্পাঞ্জি , নিজেদের ভাষায় কি তারা কথা বলে?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা প্রতিদিন কথা বলি — শব্দে, ইশারায়, মুখভঙ্গিতে। আমাদের ভাষা ভাব প্রকাশের সেতু। কিন্তু এই ক্ষমতা কি একমাত্র আমাদের? পৃথিবীর অন্য প্রাণীরাও কি নিজেদের মতো করে 'ভাষা' ব্যবহার করে?
বিজ্ঞান বলছে, হ্যাঁ — আর এ উত্তরের পেছনে আছে ডলফিনের সুরেলা শিস, কাকের চাতুর্যময় ডাক, আর শিম্পাঞ্জির মূকভাষা। এরা সবাই নিজেদের মতো করে কথা বলে, পরিকল্পনা করে, এমনকি মনের ভাবও প্রকাশ করে — শুধু আমাদের মতো করে নয়। তাহলে কি ভাষা আসলে বহুরূপী?
➤ডলফিন: সমুদ্রের শিস-ভাষার কবি !
ডলফিন শুধু চঞ্চল আর প্রানবন্ত নয়, বরং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ডলফিনরা নিজেদের সমাজে একধরনের 'শিস-ভাষা' ব্যবহার করে। প্রতিটি ডলফিনের থাকে এক নিজস্ব "সিগনেচার হুইসেল" — যেন নিজের নাম!
তারা এই শিসে একে অপরকে ডাকে, সতর্ক করে, এমনকি শিকারের সময় কৌশলও ঠিক করে ফেলে। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, ডলফিনের এই শিস এক ধরনের ধ্বনিমূলক পরিচয়পত্র, যা ব্যবহার করে তারা জটিল সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখে।
➤কাক: আকাশের কূটনীতিক ও ষড়যন্ত্রী !
পাখিদের দুনিয়ায় যদি গোপনচর বা বুদ্ধিমান কূটনীতিক কেউ থাকে, তবে সে নিঃসন্দেহে কাক। গবেষণায় দেখা গেছে, কাক শুধু মানুষের তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে না, বরং নিজেরাই সমস্যার সমাধানে উপায় বের করে।
তাদের ডাক কখনো সতর্কবার্তা, কখনো খাবার পাওয়ার উল্লাস, আবার কখনো শত্রুকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। তাদের শব্দভাষা রীতিমতো পরিকল্পিত ও প্রসঙ্গনির্ভর — যেন এক ধরণের কোডেড বার্তা। একে উপেক্ষা করা মানেই প্রাণী জগতে ভাষাবোধের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে অস্বীকার করা।
➤শিম্পাঞ্জি: নিঃশব্দ কথোপকথনের যাদুকর !
শিম্পাঞ্জিরা শুধু মানুষ জাতির ঘনিষ্ঠ নয়, তারা এক অসাধারণ নীরব ভাষার ধারকও। মুখভঙ্গি, হাতের ইশারা, দৃষ্টি বিনিময় আর স্পর্শ — এসব দিয়েই তারা তৈরি করে এক আশ্চর্য মূকভাষা।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কিছু শিম্পাঞ্জি মানুষ-প্রস্তুত প্রতীক বা 'সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ' ব্যবহার করে ১০০টিরও বেশি শব্দের অর্থ বুঝতে পারে। ভাবুন তো, তারা কথা না বলেই কথা বলে — আর আমরা বুঝতেই পারি না তাদের এই নিঃশব্দ বাক্যালাপ।
ভাষা কি কেবল শব্দের খেলাঘর ????
ভাষা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই বিতর্ক চলছে — শুধু শব্দেই কি ভাষার অস্তিত্ব? অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ভাষা হলো একটি কাঠামোগত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে একটি প্রাণী অন্যের সঙ্গে অর্থপূর্ণ বার্তা বিনিময় করে।
যদি কোনো প্রাণী সংকেত, প্রতীক বা ধ্বনির মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে এবং অপরটি তা বোঝে ও প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে তা ভাষার বিকল্প রূপ হিসেবেই গণ্য করা যায়।
ভাষা কি শুধুই মানুষের সম্পত্তি????
ডলফিনের সুরেলা ডাক, কাকের পরিকল্পিত আহ্বান, শিম্পাঞ্জির সুনিপুণ ইশারা — এসব কি কেবলই প্রাণীর প্রতিক্রিয়া? না কি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে ভাব, অভিপ্রায় ও পরিচয়?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দিনে দিনে আরও বিস্ময়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। ভাষা হয়তো একমাত্র মানুষের সম্পদ নয় — বরং এটি প্রকৃতির এক বিস্ময়কর ও বহুস্তরীয় উপহার, যার নানা রূপ আমরা কেবলমাত্র এখনই খুঁজে পেতে শুরু করেছি।