চলতি দাবদাহে শরীর-মনের ওপর চাপ, জানুন কেন এমন হচ্ছে আর কীভাবে সচেতন থাকবেন!

চলতি দাবদাহে শরীর-মনের ওপর চাপ, জানুন কেন এমন হচ্ছে আর কীভাবে সচেতন থাকবেন!
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেশজুড়ে চলছে এক ভয়াল দাবদাহ। সূর্য যেন নেমে এসেছে মাটির কাছাকাছি, আর তার তাপে জীবনের স্বাভাবিক গতি থমকে গেছে। শরীর দুর্বল, মন বিষণ্ণ —এক কথায় জনজীবন বিপর্যস্ত।

কিন্তু এই শারীরিক ও মানসিক অবসাদের পেছনে কারণ কী? শুধু গরমই না, এর গভীরে লুকিয়ে আছে বিপজ্জনক কিছু শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক প্রতিক্রিয়া।

তাপমাত্রার তাণ্ডবে শরীর-মনের সংকট :
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়ালেই শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। তাপকে ঠেকাতে গিয়ে শরীর অতিরিক্ত ঘাম ঝরায়, ফলে শরীরের জল ও লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়—যার পরিণতিতে দেখা দেয় পানিশূন্যতা ও শারীরিক দুর্বলতা।

সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে :

⇨ মাথা ঘোরা ও ঝিম ধরা

⇨ একটানা ক্লান্তি ও অলসতা

⇨ ক্ষুধা মরে যাওয়া ও বমিভাব

⇨ চোখ ঝাপসা দেখা

⇨ অতিরিক্ত ঘাম ঝরে গিয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়া—যা হিট স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ

মানসিক দিকেও পড়ছে গভীর ছাপ:

⇨ মেজাজে দ্রুত পরিবর্তন ও রাগ

⇨ একাগ্রতা কমে যাওয়া

⇨ ঘুমের ব্যাঘাত

⇨ দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা

গরমে স্নায়ু বিকল—সতর্ক হোন এখনই !!
নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. সাবিহা নাজনীন জানিয়েছেন, "চরম গরমে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য হারালে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় বাধা তৈরি হয়। এতে মাথা ঘোরা, সিদ্ধান্তহীনতা এমনকি অচেতন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।"

কে কতটা ঝুঁকিতে? জেনে নিন এখনই !!
সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন:

⇨ শিশুরা ও নবজাতক

⇨ ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক নাগরিক

⇨ যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন

⇨ খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষ—যেমন নির্মাণ শ্রমিক, ট্রাফিক পুলিশ, রিকশাচালক প্রমুখ

জীবন বাঁচাতে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস:

⇨ প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

⇨ বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি ও সানগ্লাস অবশ্যই ব্যবহার করুন।

⇨ শরীর ঠান্ডা রাখতে খান ডাবের পানি, লেবুর শরবত ও ঘরে তৈরি ওরস্যালাইন।

⇨ খাদ্যতালিকায় রাখুন শসা, তরমুজ, লাউ, পেঁপে ও টক দই।

⇨ সাদা বা হালকা রঙের সুতি কাপড় পরুন—গরম শোষণ কম হবে।

⇨ দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।

⇨ অস্বাভাবিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা বা ঘাম বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

⇨ ঘর ঠান্ডা রাখতে জানালায় পর্দা টানান, পানি রাখা বালতি রাখুন।

⇨ প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমান, বিশ্রাম শরীরকে সজীব রাখে।

⇨ মানসিক স্বস্তির জন্য হালকা গান, ধ্যান বা বই পড়া অনুশীলন করুন।


বিশেষ সতর্কতা চিকিৎসকের -
"যদি শরীর হঠাৎ করে খুব গরম লাগে, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় বা কেউ অচেতন হয়ে পড়ে—তৎক্ষণাৎ তাকে ছায়াযুক্ত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন," জানিয়েছেন ডা. শামসুজ্জোহা ইমরান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।

শেষ কথা:
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন -
গ্রীষ্মের এই দহনকাল শুধু অস্বস্তিকর নয়, বিপজ্জনকও। সচেতনতা ও কিছু সাধারণ নিয়ম মানলেই নিজেকে ও প্রিয়জনকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও অভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার।


সম্পর্কিত নিউজ