সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব-আত্ম-মূল্যায়নের আয়নায় নতুন বাস্তবতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান যুগে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ নিজের অনুভূতি, সাফল্য, মতামত ও ছবি শেয়ার করছেন। তবে এই প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি এক অদৃশ্য মানসিক চাপও তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে মানুষের আত্ম-মূল্যায়নের ওপর।
✪ আত্ম-মূল্যায়নের নতুন মানদণ্ড :
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা অন্যদের জীবনের যেসব ঝলমলে মুহূর্ত দেখি, তা আমাদের নিজের জীবনের সাথে তুলনা করার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ নিজের আত্ম-মূল্যায়ন করতে গিয়ে অন্যের 'পারফেক্ট' জীবন দেখে হতাশায় ভুগছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই 'কম্পারেটিভ লাইফস্টাইল' তৈরি করছে এক ধরনের অস্থিরতা, যা আত্মসম্মানবোধকে নষ্ট করছে।
মনোবিজ্ঞান ড. রুমানা হক বলেন, "অনেকেই নিজের জীবনের প্রকৃত অবস্থা না বুঝেই সোশ্যাল মিডিয়ার ভিত্তিতে নিজেকে বিচার করছেন। এতে করে তারা নিজেদের ছোট মনে করছেন এবং হতাশায় ভুগছেন। এটা উদ্বেগজনক।"
✪"লাইক" নির্ভর আত্মবিশ্বাস :
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক মানুষ এখন নিজেদের মূল্য নির্ধারণ করছেন লাইক, শেয়ার ও ফলোয়ারের সংখ্যার ভিত্তিতে। কেউ যদি একটি ছবি পোস্ট করে কম লাইক পায়, তাহলে তিনি ধরে নিচ্ছেন সেটা 'ভালো না'—এমনকি নিজেকেও তখন 'ভালো না' বলে মনে করতে থাকেন।
একজন তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জানায়, "আমার পোস্টে যদি লাইক কম আসে, আমি হতাশ হয়ে যাই। মনে হয় আমি কিছুই ভালো করতে পারছি না।"
এই মনোভাব দিন দিন শুধু ব্যক্তিগত নয়, পেশাগত জীবনেও প্রভাব ফেলছে। আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা তৈরি হচ্ছে।
✪ ভালো দিকও আছে :
তবে সবটাই নেতিবাচক নয়। সোশ্যাল মিডিয়া আত্ম-মূল্যায়নের একটি নতুন দরজা খুলে দিয়েছে—যেখানে মানুষ নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে, অন্যদের কাছ থেকে উৎসাহ পাচ্ছে, এবং নিজের উন্নতির সুযোগ খুঁজে পাচ্ছে।
ব্লগার ও লাইফ কোচ তামান্না রহমান বলেন, "যদি সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া এক ধরনের আয়না হয়ে উঠতে পারে—যেখানে আমরা নিজের ভেতরের শক্তি ও দুর্বলতা চিনে নিতে পারি। সমস্যা তখনই হয় যখন আমরা অন্যের জীবনকে নিজের মানদণ্ড বানিয়ে ফেলি।"
✪ করণীয় -
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্ম-মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকে ব্যালেন্স করতে হলে কিছু সচেতনতা জরুরি। যেমন:
⇨সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নির্ধারণ করে ব্যবহার করা
⇨বাস্তব জীবনে মানুষের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা
⇨নিজের অর্জনগুলোকে ছোট না দেখা
⇨ডিজিটাল ডিটক্সের মাধ্যমে মানসিক বিশ্রাম নেওয়া
✪ উপসংহার :
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে সহজ, আনন্দময় এবং তথ্যবহুল করেছে। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মেই লুকিয়ে আছে আত্ম-মূল্যায়নের জটিল এক চ্যালেঞ্জ। আমাদের দরকার সচেতনতা, আত্মবিশ্বাস এবং প্রযুক্তিকে সহায়ক বানানোর মনোভাব। তাহলেই সোশ্যাল মিডিয়া হবে আত্ম-মূল্যায়নের একটি ইতিবাচক শক্তি, আত্মবিশ্বাসের নতুন সিঁড়ি।