"ডিজিটাল মহামারিতে" রূপ নিয়েছে অনলাইন জুয়া, অভিযোগ ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের

অনলাইন জুয়া রুখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা
"ডিজিটাল মহামারিতে" রূপ নিয়েছে অনলাইন জুয়া, অভিযোগ ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার এখন নির্বিচার সামাজিক দুর্যোগ—এমন আশঙ্কা থেকে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব আজ মঙ্গলবার এই নোটিশটি ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন।

গুগলের পাশাপাশি ইয়াহু, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), হোয়াটসঅ্যাপসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে অনলাইন জুয়া সম্পর্কিত কোনো বিজ্ঞাপন বা লিংক প্রচার না হয়, সেজন্য যথাযথ নজরদারি ও কড়া পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তোলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, অনলাইনভিত্তিক জুয়া, তার প্রচারণা, অর্থ লেনদেন এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজ ভয়াবহ আসক্তির জালে আটকা পড়ছে। এর ফলে পরিবার, সমাজ এবং অর্থনীতি—তিনটিই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


যাদের বিরুদ্ধে নোটিশ:

⇨ ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব
⇨ তথ্য ও সম্প্রচার সচিব
⇨ স্বরাষ্ট্রসচিব
⇨ আইনসচিব
⇨ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)
⇨ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
⇨পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)

অ্যাপে-অ্যাপে জুয়া, ক্লিকে-ক্লিকে সর্বনাশ :
নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত, যার একটি বড় অংশ তরুণ সমাজ এবং স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগে অনলাইন ক্যাসিনো ও বেটিং সাইটগুলো দিনে দিনে আরও সহজভাবে প্রবেশযোগ্য হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিকে নোটিশে আখ্যা দেওয়া হয়েছে "ডিজিটাল মহামারি" হিসেবে।

হাজার কোটি টাকার পাচার :
দেশীয় সিন্ডিকেট ও বিদেশি প্ল্যাটফর্মের যোগসাজশ নোটিশে চাঞ্চল্যকরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিদেশি জুয়া কোম্পানিগুলো দেশীয় কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে জোট বেঁধে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। আর এসব কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
তাই, জুয়াসংশ্লিষ্ট লেনদেনে যাতে কোনোভাবেই আর্থিক সেবা প্রদান না করা হয়—সে লক্ষ্যে সব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ও তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতি কড়া নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

✪   বিজ্ঞাপন, প্রমোশন এবং শোবিজ তারকার সম্পৃক্ততা :
নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, দেশের নামিদামি সেলিব্রিটি, মডেল ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। এমনকি কিছু টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন নিউজপোর্টালও জুয়াসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে, যা সরাসরি সমাজবিরোধী কাজের উৎসাহ দেয়।

নোটিশে প্রস্তাবিত প্রধান পদক্ষেপগুলো:

⇨ দেশের ভেতরে জুয়াসংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও লিংক সম্পূর্ণ ব্লক করা।
⇨ গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
⇨ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইন জুয়াকে যারা প্রমোট করছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা।
⇨ সব ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত লেনদেন নিষিদ্ধের নির্দেশ।
⇨ পাচার ঠেকাতে বিশেষ তদারকি দল গঠন এবং নিয়মিত নজরদারি।

আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিতে জুয়া একটি অপরাধ :
নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা অনলাইন জুয়াকে আজ একটি নিয়ন্ত্রণহীন দুর্যোগে পরিণত করেছে।

নোটিশের হুঁশিয়ারি: পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে জনস্বার্থে।

শেষ কথা:
যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার নিয়ে সারা বিশ্ব জোর দিচ্ছে, তখন অনলাইন জুয়া যেন বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির ভিত না কাঁপিয়ে দেয়—এই আহ্বানেই এখন সরব সমাজের সচেতন মহল। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও প্রযুক্তি জায়ান্টরা কতটা দ্রুত এবং কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়।


সম্পর্কিত নিউজ