পুলিশের ওপর আঃ লীগের ধারাবাহিক হামলা: অস্থিতিশীলতা তৈরির গোপন তৎপরতা?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে দাবি করছে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক মহল। সম্প্রতি পুলিশের ওপর বেড়ে চলা হামলার পেছনে একটি সুপরিকল্পিত গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন পরাজিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সাবেক সদস্যরাও।
বিশেষ সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধভাবে রাজধানীমুখী হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য—পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা।
গত সাত মাসে সারা দেশে পুলিশের ওপর পাঁচ শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুধু মার্চ মাসেই এ সংখ্যা ছিল ৯৬টি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সুসংগঠিত অপচেষ্টা, যার মাধ্যমে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১২ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুরে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতারের পর, তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনার পর গোলাম মোস্তফা পুনরায় আত্মগোপনে চলে যান। একইভাবে হবিগঞ্জে পুলিশের হাত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া এবং পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পুলিশের মনোবল ভাঙারও চেষ্টা চলছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের একটি অংশ নিয়মিতভাবে ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পুলিশবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের মধ্যে এখন ‘মব আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। থানা ভবনেও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “অপরাধীরা সবসময় সুযোগ নিতে চায়, কিন্তু পুলিশ যদি দুর্বল হয়, তাহলে তারা আরও সাহস পায়। এখনই কঠোর অ্যাকশন দরকার।”
অপর এক সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, “পুলিশ অস্বাভাবিক একটি সময় পার করছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই হামলাগুলো প্রতিহত করতে না পারলে আরও বড় সংকট তৈরি হবে।”
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এসব ঘটনায় ৩২২টি মামলা হয়েছে এবং হামলাকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডিএমপির আওতায় সবচেয়ে বেশি হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি মামলা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রেকর্ড করা হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী এখনো সন্ত্রাসী কৌশলে অস্থিরতা তৈরি করে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুর্বল করার এই অপচেষ্টা রুখতে হলে জাতীয়ভাবে ঐক্য ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।