"অ্যাম্বুলেন্সে নয়, চিকিৎসা নিয়ে মরতে চাই"—পঞ্চগড়ের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বানে গর্জে উঠল রাজধানী

"অ্যাম্বুলেন্সে নয়, চিকিৎসা নিয়ে মরতে চাই"—পঞ্চগড়ের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বানে গর্জে উঠল রাজধানী
ছবির ক্যাপশান, ছবি সংগৃহীত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

১০০০ শয্যার হাসপাতাল চাই পঞ্চগড়ে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জেলাবাসীর মানববন্ধন। ঢাকার ব্যস্ত সকালটায় হঠাৎই যেন থমকে দাঁড়ায় সবকিছু। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গলায় গলায় মিশে যায় শত শত কণ্ঠ—একটাই দাবি, "চিকিৎসা চাই, বাঁচতে চাই!" পঞ্চগড়ের মানুষ আজ আর চুপ করে নেই। চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত এক হাজার শয্যার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পঞ্চগড়েই চাই—এই দাবি নিয়ে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো জোরালো মানববন্ধন।

পঞ্চগড় জেলা সমিতির আয়োজনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন ঢাকায় বসবাসরত জেলার নানা পেশার মানুষ থেকে শুরু করে তরুণ শিক্ষার্থীরাও। প্রখর রোদ্দুরের নিচে দাঁড়িয়ে তারা জানিয়ে দিলেন—"আমরা আর রংপুর বা দিনাজপুরে ছুটে গিয়ে প্রাণ দিতে চাই না। নিজের মাটিতে চিকিৎসা নিয়ে মরতে চাই।"

মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ড. আব্দুর রহমান, জাগপা'র সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, ইঞ্জিনিয়ার আইনুল হক পিইঞ্জ, সফিউল আলম, আনজারুল হক, মুক্তার আলম, মাখদুম মাসুম মাশরাফি যুক্তি, মাসুদ, সরোয়ারসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন—"উত্তরের সম্ভাবনার নাম পঞ্চগড়, কিন্তু চিকিৎসাসেবায় আমরা এখনো বঞ্চিত।"

বক্তারা বলেন, "বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় যেনো অবহেলার ছায়াতলে ঢাকা পড়ে আছে। ১২ লক্ষ মানুষের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার বাইরে কোনো ভরসা নেই। অল্প কিছুটা উন্নত সেবার জন্যও পাড়ি দিতে হয় ১৫০-২০০ কিমি। তাতে মৃত্যুও হয়ে ওঠে অনেকের নিত্যসঙ্গী। এমন মৃত্যু আর নয়!"

তারা আরও বলেন, "পঞ্চগড়ের মানুষ দেখে গেছে অনেক এমপি-মন্ত্রী, স্পিকার, সরকার বাহাদুর। কিন্তু চোখে দেখেনি আধুনিক কোনো হাসপাতাল। এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত বদলের। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে বৈষম্যহীন উন্নয়ন চাই। আর সে উন্নয়নের শুরু হোক পঞ্চগড়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাধ্যমে।"

শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে উঠে আসে পঞ্চগড়ের ভূগোল আর সম্ভাবনার গল্প—"বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে মাত্র ৬১ কিমি দূরে নেপাল, ৬৪ কিমি ভুটান, ২০০ কিমি চীন, ৫৮ কিমি দার্জিলিং, ৮ কিমি শিলিগুড়ি, এমনকি হিমালয়ের চূড়াও মাত্র ৭৫ কিমি দূরে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের জেলায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হলে আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা যেমন সম্ভব, তেমনি ভুটান-নেপালের শিক্ষার্থীরাও পড়তে আসবে এখানে।"

সকল বক্তারই এক কথা—এ দাবি শুধু পঞ্চগড়ের নয়, এ দাবি ন্যায্যতার, জীবনবাঁচানোর। এবং যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে—এ হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন তারা।

পঞ্চগড় আজ জেগেছে। এবার ইতিহাস গড়ার পালা।
চিকিৎসা আর অবহেলার নয়—এবার উন্নয়নের দাবিতে পথে নেমেছে উত্তর জনপদের গর্বিত মানুষ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ