গ্রীষ্মে চুলের যত্ন: বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, ভিতরের সুস্থতাও জরুরি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রকাশ হলেও, স্বাস্থ্যবান চুল রক্ষণাবেক্ষণ করা বিশেষ করে গরমকালে হয়ে ওঠে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়কাল অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র হয়ে থাকে, যা চুলের স্বাভাবিক গঠন ও গ্রোথ সাইকেলে প্রভাব ফেলে।
প্রচণ্ড রোদ, ঘাম, ধুলাবালি ও আর্দ্রতা সরাসরি প্রভাব ফেলে স্ক্যাল্প ও চুলের স্বাস্থ্যের ওপর। ফলে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, পড়ে যেতে পারে অধিক হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই চুল রাখা যায় সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।
✪ চুলের স্বাস্থ্য গ্রীষ্মে কেন ঝুঁকির মুখে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। ঘাম জমে মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের জন্ম হয়, যার ফলে স্ক্যাল্পে চুলকানি, খুশকি এবং ইনফেকশন হতে পারে। একইসাথে রোদে পুড়ে গিয়ে চুলের কেরাটিন স্তর দুর্বল হয়ে যায়।
ডার্মাটোলজিস্ট ডা. ফারহানা কবির বলেন,
"গরমকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম নামে একটি অবস্থা, যেখানে চুলের গ্রোথ সাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অতিরিক্ত হারে চুল পড়তে শুরু করে। এটি মানসিক চাপ ও শরীরের পানিশূন্যতার সাথেও সম্পর্কযুক্ত।"
✪ গ্রীষ্মে চুলের সমস্যাগুলো কী কী?
১. অতিরিক্ত ঘাম: স্ক্যাল্পে ঘাম জমে চুলের গোড়ায় জীবাণু জন্মাতে পারে।
২. ধুলাবালি ও দূষণ: রাস্তাঘাটে বের হলে চুলে ধুলা জমে, যা ব্লক করে স্ক্যাল্পের ছিদ্র।
৩. সূর্যের UV রশ্মি: রোদের তাপে কিউটিকল নষ্ট হয়, চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়।
৪. বেশি শ্যাম্পু: অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়, ফলে চুল আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে।
✪ করণীয় – কার্যকর পরামর্শ :
১. নিয়মিত পরিষ্কার:
সপ্তাহে ২-৩ বার সালফেট-মুক্ত হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ঘাম জমে থাকলে দিনে একবার কেবল পানি দিয়েও ধুতে পারেন।
২. তেল ও স্ক্যাল্প কেয়ার:
হালকা নারকেল, বাদাম বা জোজোবা তেল দিয়ে সপ্তাহে একবার ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়ে ও চুলের গোড়া মজবুত হয়।
৩. প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্ক:
⇨দই + অ্যালোভেরা + মধু হেয়ার প্যাক
⇨কলা + নারকেল তেল + ডিম প্যাক
-এসব মাস্ক চুলে ময়েশ্চার ধরে রাখে ও প্রাকৃতিকভাবে চুল কন্ডিশন করে।
৪. UV প্রোটেকশন:
স্কার্ফ, হ্যাট বা UV-প্রটেকশন হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন বাইরে যাওয়ার আগে।
৫. হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলুন:
হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লার গরমে চুলের ক্ষতি বাড়ায়। সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন।
৬. পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা:
ভিটামিন B7 (বায়োটিন), আয়রন, দুধ, ডিম, মাছ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চুল পড়া কমাতে নিয়মিত খাবারে রাখতে পারেন—
⇨কাজু, বাদাম, বীজজাতীয় খাবার
⇨গ্রিন টি (অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ)
⇨চিয়া সিড বা ফ্ল্যাক্স সিড
৭. হেয়ার সিরাম ও এসেনশিয়াল অয়েল:
গরমকালে হালকা হেয়ার সিরাম যেমন আর্গান অয়েল বেসড প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এটি UV রশ্মি থেকেও সুরক্ষা দেয়। চুলে এক ফোঁটা রোজমেরি বা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলও ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
✪ জরিপ :
একটি অনলাইন বিউটি ফোরামের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭৬% তরুণ-তরুণী গরমকালে চুল পড়া ও খুশকির সমস্যায় ভোগেন। তবে যারা নিয়মিত স্ক্যাল্প কেয়ার, হালকা তেল ব্যবহার ও ডায়েট মেইনটেইন করেন, তাদের সমস্যার হার তুলনামূলক কম।
✪ বিশেষজ্ঞের মতামত:
পাশের শহরের চর্ম ও চুল বিশেষজ্ঞ ডা. আফসানা হক বলেন,
"গরমে স্ক্যাল্পে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেড়ে যায়। তাই চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখাটা সবচেয়ে জরুরি। ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নিলে প্রাকৃতিকভাবে চুলকে রক্ষা করা যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে উপকারী।"
চুলের যত্ন এখন আর কেবল ফ্যাশনের অংশ নয়, এটি স্বাস্থ্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। গ্রীষ্মকালীন পরিবেশে চুলের সুরক্ষায় প্রয়োজন ধারাবাহিক যত্ন, পরিশীলিত অভ্যাস ও খাদ্যভিত্তিক সচেতনতা। একমাত্র তখনই গরমের রুক্ষতা ঠেলে চুল ফিরে পাবে তার প্রাকৃতিক দীপ্তি ও স্বাস্থ্য।