দিনাজপুরে ভবেশ রায়ের মৃত্যু নিয়ে ভারত-বাংলাদেশে উত্তেজনা: স্বাভাবিক মৃত্যু না পরিকল্পিত হত্যা?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় পূজা উদযাপন পরিষদের এক নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সরকারের অবস্থান একেবারে বিপরীত মেরুতে—যেখানে ভারত একে "নৃশংস হত্যাকাণ্ড" বলছে, বাংলাদেশ বলছে "স্বাভাবিক মৃত্যু।"
কী ঘটেছিল সেদিন?
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃত্যু হয় ভবেশ চন্দ্র রায়ের, যিনি বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চারজন মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর দুই ঘণ্টার মধ্যে খবর আসে—তিনি গুরুতর অসুস্থ।
তার ছেলে স্বপন চন্দ্র রায়ের ভাষ্যে, "একজন ফোন করে জানায় বাবা অসুস্থ। আমি বলি, হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তারা বারবার আমাকেই যেতে বলছিল।"
অবশেষে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তিনি সেখানে গেলে দেখেন, তার বাবাকে একটি ভ্যানে অচেতন অবস্থায় রাখা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, ভবেশ রায় আগেই মারা গেছেন।
"এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না," বলেন স্বপন। "একজন সুস্থ মানুষকে ডেকে নিয়ে গেল, আর দুই ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হলো—তাও কোনো চিকিৎসা ছাড়াই?"
পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ
পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, মৃতদেহে গলা ও ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারা বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড বলেই মনে করছেন এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। "আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যু। সুরতহাল রিপোর্টেও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি," বলেন তিনি।
তবুও, পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি। "পরিবার মামলা করুক বা না করুক, অস্বাভাবিক কিছু পেলে পুলিশ নিজেই আইনি পদক্ষেপ নেবে।"
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ভারতের কড়া মন্তব্য
ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই এটি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ লেখেন, "বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতনের অংশ হিসেবেই ভবেশ রায়ের অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।"
তিনি আরও বলেন, "অপরাধীরা আগের ঘটনার মতো এবারও দায়মুক্তি পাবে, এমনটি মেনে নেওয়া যায় না।"
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া: 'ভিত্তিহীন অভিযোগ'
ভারতের এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "এ অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।"
তিনি জানান, ময়নাতদন্তে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ভিসেরা বিশ্লেষণের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।
"ভবেশ রায়ের মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা হলেও, এটিকে ধর্মীয় নিপীড়নের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা অযৌক্তিক," বলেন শফিকুল আলম। তিনি বিভ্রান্তিকর মন্তব্য না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তদন্ত চলছে, অপেক্ষায় রিপোর্ট
মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে, আর সরকার বলছে, রিপোর্ট এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও ঘটনার ছায়া পড়তে শুরু করেছে।
এই মৃত্যু আসলেই স্বাভাবিক, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো পরিকল্পিত ঘটনা—তা নির্ভর করছে পরবর্তী তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের ওপর। আর সেই অপেক্ষায় আছে পরিবার, দেশবাসী এবং দুই দেশের রাজনৈতিক মহল।