মাইগ্রেনের যন্ত্রণা বাড়ানোর পেছনে দায়ী এই খাবারগুলো!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মাইগ্রেনের ব্যথা যারা ভোগেন, তারাই বোঝেন এর যন্ত্রণা কতটা কষ্টদায়ক। এই ব্যথা শুধু মাথাব্যথা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বমিভাব, চোখে যন্ত্রণা, আলো ও শব্দে অসহিষ্ণুতা, এমনকি খিদে কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও। কিন্তু জানেন কি, আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসই মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে বা কমাতে বড় ভূমিকা পালন করে? আজ আমরা জানবো, কোন খাবারগুলো মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায় এবং কোন খাবারগুলো এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
মাইগ্রেন কী এবং কেন হয়?
মাইগ্রেন এক ধরনের প্রাইমারি হেডেক (মাথাব্যথা), যা সাধারণত মাথার এক পাশে তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইগ্রেন রোগীদের মস্তিষ্কে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কম থাকে। এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ উপোস থাকা, সময়মতো খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত চকলেট, পনির বা ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে।
কোন খাবারগুলো মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায়?
১. টাইরামিন সমৃদ্ধ খাবার:
টাইরামিন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা মস্তিষ্কের রক্তনালী সংকুচিত করে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায়। এই পদার্থটি বেশি থাকে পনির, চকলেট, অ্যালকোহল, সয়া সস, ডিম, কমলালেবু, ডুমুর, কলা, টমেটো এবং কিশমিশে। মাইগ্রেন রোগীদের এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
২. ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার:
ফাস্ট ফুড যেমন ম্যাগি, পাস্তা, পিৎজা, বিরিয়ানি ইত্যাদিতে আজিনোমোটো (মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট) নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে। এছাড়াও, চাইনিজ ফুডে ব্যবহৃত সস এবং প্রিজারভেটিভও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
৩. ক্যাফেইন ও দুগ্ধজাত খাবার:
অতিরিক্ত কফি, চা, সফট ড্রিংকস এবং দুধ, চিজ, ফুল ক্রিম দই, কনডেন্সড মিল্ক ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে।
৪. রেড মিট ও সীফুড:
রেড মিট, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছের মাথা, মাছের ডিম, লিভার, কিডনি ইত্যাদি খাবারও মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে।
৫. সাইট্রাস ফল ও মিষ্টি জাতীয় খাবার:
লেবু, আনারস, কমলালেবু, নারকেল এবং অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে।
কোন খাবারগুলো মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়?
১. ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পালং শাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ, আমন্ড, সাদা তিল, ওটস, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া ইত্যাদি খাবারে পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:
স্যামন মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট, ভুট্টা ইত্যাদি খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৩. তাজা শাকসবজি ও ফল:
কুমড়া, আলু, গাজর, ঝিঙে, লাউ, করলা, আপেল, পেঁপে, নাশপাতি, তরমুজ, বেদানা ইত্যাদি তাজা শাকসবজি ও ফল মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪. হাইড্রেশন:
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। এছাড়াও, স্যুপ, হারবাল টি (গ্রিন টি, আদা চা, ক্যামোমাইল চা) খাওয়া যেতে পারে।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
-
প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন।
-
বাইরের তৈলাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
-
অল্প অল্প করে, দুই ঘণ্টা পর পর খাবার খান।
-
ঠাণ্ডা খাবার বা পানীয় খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন।
-
পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম। যে খাবারগুলো মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান। নিয়মিত হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন!