রুপির দরপতনে নতুন রেকর্ড: ১ ডলারে ৮৭ রুপি অতিক্রম, বাজারে উত্তাপ!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভারতীয় মুদ্রা রুপির দরপতন অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রুপির মান সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়—প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮৭.৫৭ রুপি। পরে অবশ্য রুপির মান কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ৮৭.৫৩।
গত সোমবার প্রথমবারের মতো ডলারের মান ৮৭ রুপি ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে রুপির দরপতন ধারাবাহিকভাবে চলছে। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। এই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে রুপির দর ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। সোমবার ডলারের বিপরীতে রুপির ৬৭ পয়সা দরপতন হয়েছিল, আর গতকাল বুধবার হয়েছে ৩৯ পয়সা। রুপির এই ধসে ভারতীয় অর্থনৈতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় মুদ্রা আর কতটা দুর্বল হবে? নতুন বছরের শুরুতেই ডলারের মান ৮৬ ছাড়িয়ে ৮৭-এর মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের নীতির সঙ্গেও এই দরপতনের সম্পর্ক রয়েছে।
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রুপির দরপতন নিয়ে অতটা উদ্বিগ্ন নয়। দেশটির অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে আশ্বস্ত করেছেন যে চিন্তার কিছু নেই। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) মুদ্রার অস্থিরতা সামলাচ্ছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের কারণে বিনিময়মূল্য চাপের মুখে পড়েছে। তবে তাঁর দাবি, রুপির লেনদেন অবাধ হচ্ছে এবং মুদ্রার দর নিয়ন্ত্রণ বা স্থায়ী দাম বলে কিছু থাকতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা রুপির দরপতনের মূল কারণ। এছাড়া, চলতি সপ্তাহে রুপির এই দরপতনের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের নীতির কারণে রুপির দরপতন ত্বরান্বিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তের কারণে শুধু ভারত নয়, সব উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রাই দুর্বল হয়েছে। ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতির পাশাপাশি ভারতের বাজেটও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে, যা ডলারের চাহিদা বাড়িয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যত বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, ততই অন্যান্য দেশের মুদ্রার তুলনায় ডলার শক্তিশালী হবে। এর ফলে রুপির দরপতন অব্যাহত থাকবে, যা ভারতের আমদানিকারকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন সম্প্রতি বলেছেন, রুপির দরপতন নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি মনে করেন, ভারতীয় মুদ্রার এই ধারাবাহিক দরপতন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মুদ্রার শক্তি নিশ্চিতভাবেই রুপি-ডলারের সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। কিন্তু বিষয়টি হলো, অনেক দেশের মুদ্রার তুলনায় ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এমনকি ডলারের সাপেক্ষে ইউরোর দরপতন হয়েছে। গত এক বছরে ইউরোর দরপতন হয়েছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। ভারতের বাজারে ডলারের দাম ৮৩ থেকে ৮৬ রুপিতে ওঠা সেই তুলনায় কম।’
এদিকে, বিশ্ববাজারে ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে সোনার দামও বাড়ছে। প্রতি আউন্স সোনার দাম এখন ২,৮৭০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।